স্বপ্নে আমার ফুটবল

সেই ছোট বেলা থেকেই ফুটবল খেলার পাগল আমার এক বন্ধু। অন্ধ ভক্তই বলা চলে। জন্মের পর থেকেই নাকি সে আর্জেন্টাইন সাপোর্টার। জন্মের পর থেকে বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা মেসি-ম্যরাডোনা ছাড়া আর কাউকে চিনে না এমন সাপোর্টার থেকে তাকে আলাদা করা। ফুটবল নিয়ে তার একটাই স্বপ্ন শুধু একবার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হাতে কাপ দেখা। প্রতিবার বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই সে প্রতিরাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন তারা কাপ নিচ্ছে। এটা এখন একটা ফোবিয়ার আকার ধারন করেছে। প্রায়ই তার রুম ম্যাট তাকে ঘুমের মধ্যে হাসতে দেখে! কাপ, আরজেন্টিনা কি সব ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথা বলে। এমনকি মাঝে মাঝে নাকি ঘুমের মধ্যে হাত পা ছোটা-ছুটি করে।

এমনই ডাই হার্ড আর্জেন্টাইন ফ্যান, আমার বন্ধু, তার ল্যাটেস্ট স্বপ্নর কথা আমাকে বলে। স্বপ্নের সুত্রপাত নাকি গত কোপা আমেরিকার ফাইনালে তাদের শোচনীয় হারের পর। তার স্বপ্নের বর্ণনা ছিল অনেকটা এমন- প্রতি দিন বন্ধু-বান্ধবের সাথে ফুটবল নিয়ে কম-বেশি কথা-বার্তা, তর্ক-বিতর্ক, গালাগালি, মারামারি হয়। সেদিন চিলির কাছে - গোলে শোচনীয় হারের পর আর্জেন্টাইন বিরোধীদের সকল কথা গলাধকরন করে হজম করতে না পেরে গোটা কয়েক হাজমলা খেয়ে দিলাম ঘুম। মাথায় একটাই টেনশন যেভাবেই হোক আমাদের জিততেই হবে। শুধু তাই না কোন চ্যাম্পিয়ন দলের সাথে ফাইনাল খেলে জিততে হবে। তাহলেই ফুটবল সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচা যাবে। তো যেই ভাবা সেই স্বপ্ন। তার স্বপ্নে আজকে ফুটবল ফাইনাল খেলা। ফাইনাল হচ্ছে আরজেন্টিনা বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। এতক্ষন পর্যন্ত কথাগুলোর বর্ণনা অনুযায়ী ব্যাপারটা আমি একটা সাধারন স্বপ্ন হিসেবে ধরে নিতে পারতাম কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার এই দল কোন ফুটবল দল না; এযে তাদের ক্রিকেট দল। এখানে তাদের উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় শেন ওয়ারন, ব্রেট লী প্রমুখ। শুধু তাই না সে এই খেলা লাইভ দেখছে এমনকি শেন ওয়ারন-এর অটোগ্রাফ নিয়েছে সে।

এতটুকু শোনার পর হাসতে হাসতে আমার পেট ফাটার উপক্রম। এমতাবস্থায় কোন এক জানা না-জানা কারনে তার আর স্বপ্ন বলা হোল না। আমারও আর জানা হোল না। এখন আমার মনের মধ্যে একটাই বিরাট প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে যে আর্জেন্টিনা কি ম্যাচটা জিতেছিল? নাকি!!

তার রুম ম্যাট কে জিজ্ঞেস করব; সে কি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে চিৎকার করে আর্জেন্টিনা জিতেছে বলে উঠেছে নাকি ফলাফলটা এমন ছিল যে তার ধারনাই চেঞ্জ করে দিয়েছে? বন্ধু আমার কি এখন বুঝতে পেরেছে যে শিরোপা চুম্বন শুধু ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি প্রভৃতির কর্ম, এটা হারে হারে টের পেয়ে মেনে নেয়া ছাড়া আর উপায় নাই। আর্জেন্টিনার বৃথা আস্ফালন প্রথম রাউন্ড, দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল সহিত দুই যুগ পর পর বিশ্বকাপ ফাইনাল পর্যন্তই। তার ধারনা হওয়া অস্বাভাবিক না যে বেঁচে থাকলে ২০৭৬ সালে হ্যালির ধুমকেতু দেখতে পারব কিন্তু আর্জেন্টিনার কাপ নেয়া দেখতে পারব কিনা সন্দেহ আছে!!

Comments

Popular Post

তুমি আমার মানে, পুরোটাই আমার

মুক্ত করে দিব পাখির মত

মা, মামুনি, আম্মু, আম্মা, মম