ইচ্ছে পূরণ

দু দিন বাদে ঈদ! হিমিকা হসপিটালের বেডে শুয়ে। রাত ৩ টা। সেহরির জন্য বলেই হয়ত এত রাতেও আশে পাশে বেশ আলো। বুকের ভেতর কি কি যন্ত্রপাতি দেয়া। অস্থির লাগছে। হিমিকার খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে। আর বাসায় ফেলে রাখা যে উপন্যাসের এখনো কয়েক পাতা বাকি তার জন্য বিরক্ত লাগছে। হসপিটাল থেকে যে বাসা খুব বেশি দূর তা না, তার ইচ্ছে হচ্ছে মি. ইন্ডিয়ার মুভির সেই অদৃশ্য পোশাক পড়ে বাসায় গিয়ে বইটা নিয়ে এসে আবার হসপিটালের বেডে শুয়ে পড়বে! ভাবতেই তার মজা লাগছিল। সি সি ইউ তে কাউকে ঢোকা নিষেধ। কাউকে যে চায়ের কথা বলবে তার উপায় নেই।
নাহ! আর ভালো লাগছেনা, হাতের স্যালাইনটা খুলে ফেললো সাহস করে, বুকের ব্যাথাটা নাই! খামোখা শুইয়ে রেখেছে। রুমটা নতুন, এখনো নতুন রঙের বিদঘুটে গন্ধ। হিমিকা বেড থেকে নামল, বুকের যন্ত্রপাতি গুলো খুলতে পারলে শান্তি পেত! নাহ ওগুলো খোলা যাচ্ছেনা, একটা বড় মেশিনের সাথে আটকানো। হিমিকার বড্ড অস্থির লাগছে। বেডের উপর বসে পাশে জানালার দিকে তাকাল। দূরের ল্যাম্পপোস্ট, কোথাও কোন শব্দ নেই। হিমিকার মনে হচ্ছে বইটা শেষ না করে য মদি মরে যাই তাহলে বিপদ। নাহ যে করেই হোক বইটা আনাতে হবে।
হঠাত হিমিকা রুমের ভেতর বেলী ফুলের ঘ্রান পায়। পেছনে ফিরতেই দেখে হিমালয়! হিমিকা বিচলিত হয়ে বলে "হিমু তুই এসেছিস! হিমিকা দেখল হিমালয়ের এক হাতে বেলী আর এক হাতে চায়ের ফ্ল্যক্স। হিমিকার চোখ চক চক করতে লাগল।
হিমিকাঃ তোকে ওরা ঢুকতে দিল? তুই জানলি কিভাবে চা খেতে ইচ্ছে করছে? বাসায় আট কুঠুরি নয় দরজার বইটা এনে দিবি?
হিমালয় চায়ের ফ্ল্যাক্স থেকে চায়ের কাপে চা নিয়ে হিমিকাকে দিল। হিমিকা চা চুমুক দিতেই বলল, আহা! ইচ্ছেটা পূর্ণ করলি। হিমালয়ের মুখে কথা নেই। সে মেশিনটার দিকে তাকিয়ে আছে।
হিমিকা হেসে বলেঃ " ওটায় কি দেখছিস? তুইতো আমার হার্টবিট অনেক আগে থেকেই চিনিস। ওটা ডাক্তারদের জন্য, ওরা বুঝেনা তাই চোখ দিয়ে কি যেন দেখে। হাহাহাহাহাহা!
চা শেষ করে হিমিকা বেলীফুল গুলো হাতে নিয়ে হিমালয়কে বললঃ হিমু, তোর মনে আছে, একদিন তুই আমায় জড়িয়ে ধরে বসে এক ঈশ্বরবাদীর গল্প শোনাচ্ছিলি! কিভাবে জগত সৃষ্টি হলো? কিভাবে যুগে যুগে ঈশ্বরের রুপ বদল হোলো?  কিভাবে মানুষ এলো! আমাকে আবার সেই গল্প বল না।
এই বলে, হিমিকা বেডে হেলান দিল। জানালা দিয়ে হুরমুর করে বাতাস আসছে। হিমিকা দেখল, হিমালয় তার ঠিক পাশে বসেছে, তার হাতটা ধরে সেই এক ঈশ্বরের কাহিনী শুনাচ্ছে। হিমিকার ভাল লাগছে। তাদের হাতের মুঠোয় বেলীগুলো। হিমিকা হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বুকটা চিনচিন করছে! হিমিকা চোখ বন্ধ করল! বিড়বিড় করে বলল-" হিমু আমাকে একদিন সমুদ্রে নিয়ে যাস! আমি তোর সাথে পা ভিজাব!"

ভোর বেলায় ডিউটি ডাক্তার এল- এ কি আপনি স্যালাইন খুলেছেন কেন? কি সাংঘাতিক!  হিমিকা হচকচিয়ে দেখল তার হাতে বেলী নেই, পাশের চায়ের কাপটাও উধাও!
আর হিমু???!!!!!!!!!!!!


Comments

Popular Post

তুমি আমার মানে, পুরোটাই আমার

মুক্ত করে দিব পাখির মত

মা, মামুনি, আম্মু, আম্মা, মম