Posts

Showing posts from 2019

একটি অবসাদ সময়ের কিছু কথা

Image
এতদিনের পুরনো ঘরটা ছেড়ে দিতে হবে। জানালাটাও। পাখিগুলো থাকবে। সকালবেলা নানা কীর্তি করবে কাঠবিড়ালী। ইলেক্ট্রিসিটির তার বেয়ে সার্কাস দেখাবে শালিক আথবা বুলবুলি। কিন্তু এইসব দেখার জন্য আমি থাকবনা। জানালা দিয়ে দূরে ঘাসবন , কাশবন অথবা বেগুনি রঙের নাম না জানা কোন ফুলের শিশিরভেজা ঘ্রাণ। হারিয়ে যাবে সব। শুধু আমার কাছ থেকে। জানালার গ্রিল আকড়ে থাকা মানিপ্ল্যান্টগুলো হয়তো শুকিয়ে যাবে। এই জানালায় দেখা বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি , ভিজে চুপচুপে হয়ে যাওয়া শালিকের পালক ফুলিয়ে গম্ভীর চেহারায় বসে থাকা। বৃষ্টির ঘ্রাণ। সব হারিয়ে যাবে। শুধু আমার থেকে। নানা রঙের পালকওয়ালা কোন কাঠঠোকরার বোকা বোকা চেহারা করে নারকেল গাছে ঠক ঠক করা হয়তো অব্যহত থাকবে। কিন্তু ওদের গায়ে কয়টি রং আছে বসে থেকে গুনবে না কেউ। নতুন কেউ আসবে। যে হয়তো এই জানালায় ঝুলিয়ে রাখবে মোটা কোন পর্দা। সবসময়। নতুন কেউ আসবে যে হয়তো আমার মতো নয়। যে হয়তো এই জানায় তাকিয়ে প্রতিটি সকালকে স্বাগত জানাবেনা। যে হয়তো...

একজন বদি মিয়ার গল্প (খন্ড ‌এক)

Image
বদি মিয়া মৃত্যু সহ্যা! সবাই তার চারপাশে ঘিরে আছে, অবাক ব্যাপার বদি মিয়া ছাড়া ঘরে তার পরিবার পরিজন কারো চোখে কোনো পানি নেই, সবাই যেন মৃত্যুর আগে মানুষের কষ্ট কেমন হয় সেই ম্যাজিক দেখার আগ্রহ নিয়ে ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে। ঘরের মধ্যে এক বিচ্ছিরি গন্ধ! কিছু ধুপ, আর আগর বাতির। সবাই যেন তার মৃত্যুর বার্তা নিয়ে আগে থেকে তৈরি! বদি মিয়া ঝাপ্সা চোখে স্পষ্ট সালমা বেগমকে দেখছে!এই ৫০ বছরেও ওকে কি শুভ্র দেখাচ্ছে। চুল গুলো আজও বাধতে শেখেনি, কিন্তু এলোমেলো সেই চুলের মায়া মুখ খানি কি প্রশান্তির! যেন এক শান্তির দেবী! সালমা বেগম ঠিক তার পাশে বসা। বদী মিয়া আর কারো না, শুধু সালমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভেতরটা চিৎকার করছে, ক্ষমা চাচ্ছে। আশ্চর্য!বদি মিয়ার সেই চিৎকার সালমা বেগম শুনছে না। এই ঘরের কেউই শুনছে না। সেই চিৎকার প্রতিধ্বনি হয়ে বদী মিয়ার কানে যাচ্ছে। কি অসহ্য আর্তনাদ! বদী মিয়ার মৃত্যুর যন্ত্রনা আরো প্রখর হতে থাকে। তার গলা শুকিয়ে ওষ্ট কাঠ। সালমা বেগম শুধু তাকিয়ে আছে, যেন বদী মিয়ার মৃত্যুর যন্ত্রনা দেখার প্রতীক্ষায়। হঠাৎ তিনি দেখলেন সালমা বেগম উঠে চলে যাচ্ছে, তাহলে কি সে বদী মিয়ার মৃত্যু যন্ত্রনা দেখবে...

ইচ্ছে পূরণ

Image
দু দিন বাদে ঈদ! হিমিকা হসপিটালের বেডে শুয়ে। রাত ৩ টা। সেহরির জন্য বলেই হয়ত এত রাতেও আশে পাশে বেশ আলো। বুকের ভেতর কি কি যন্ত্রপাতি দেয়া। অস্থির লাগছে। হিমিকার খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে। আর বাসায় ফেলে রাখা যে উপন্যাসের এখনো কয়েক পাতা বাকি তার জন্য বিরক্ত লাগছে। হসপিটাল থেকে যে বাসা খুব বেশি দূর তা না, তার ইচ্ছে হচ্ছে মি. ইন্ডিয়ার মুভির সেই অদৃশ্য পোশাক পড়ে বাসায় গিয়ে বইটা নিয়ে এসে আবার হসপিটালের বেডে শুয়ে পড়বে! ভাবতেই তার মজা লাগছিল। সি সি ইউ তে কাউকে ঢোকা নিষেধ। কাউকে যে চায়ের কথা বলবে তার উপায় নেই। নাহ! আর ভালো লাগছেনা, হাতের স্যালাইনটা খুলে ফেললো সাহস করে, বুকের ব্যাথাটা নাই! খামোখা শুইয়ে রেখেছে। রুমটা নতুন, এখনো নতুন রঙের বিদঘুটে গন্ধ। হিমিকা বেড থেকে নামল, বুকের যন্ত্রপাতি গুলো খুলতে পারলে শান্তি পেত! নাহ ওগুলো খোলা যাচ্ছেনা, একটা বড় মেশিনের সাথে আটকানো। হিমিকার বড্ড অস্থির লাগছে। বেডের উপর বসে পাশে জানালার দিকে তাকাল। দূরের ল্যাম্পপোস্ট, কোথাও কোন শব্দ নেই। হিমিকার মনে হচ্ছে বইটা শেষ না করে য মদি মরে যাই তাহলে বিপদ। নাহ যে করেই হোক বইটা আনাতে হবে। হঠাত হিমিকা রুমের ভেতর বেলী ফুলের ...

রক্তিম কৃষ্ণচূড়া

Image
ভোর বেলা হিমিকা তার সেই প্রিয় রাস্তা ধরে হাটছে।প্রশান্তির ঠান্ডা বাতাস তাকে ছুয়ে দেয়! রাস্তার পাশ ধরে শুধু কৃষ্ণচূড়া।হঠাৎ তার চোখে ভেসে উঠে কোন এক পড়ন্ত বিকেলে হিমালয়ের সাথে থাকা মূহুর্তঃ ---------------------------------------------------------------- হিমালয়ঃ মনে করো এক বিশাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের সিংহাসন গড়ে দিলাম তোমার জন্য, তোমার এক পৃথিবী ভালোবাসার জন্য সেখানে বসব আমরা পড়ন্ত বিকেলে ঠিক গাছের 'পরে নীলচে আকাশ নিচে! হিমিকাঃ আমার খোঁপায় দিবে কৃষ্ণচূড়ার থোকা থোকা সাজানো পুষ্পমঞ্জরির ঢল চাইব না আমি!জানবে মনে হয়ত তাই এই কবিতা শুধু কানে ফিসফিসিয়ে বলবে, "প্রিয়া,কৃষ্ণচূড়ার ওই লম্বাঢলটায় খুব মানাতো তোমার খোঁপা!" হিমালয়ঃ আরো অবাক করে ঢের কাছে এসে ভয় পাইয়ে বললে- "কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে শাড়ী বানাবো, রোজ জড়াব তোমায় এই লাল-হলুদের মিষ্টি ভালোবাসায়!" হিমিকা এই শুনে হিমালয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে বলেঃ আজ আমার কৃষ্ণচূড়া দিবস আজ আমি কৃষ্ণচূড়া ছাড়া কোনো ফুল দেখব না আজ কৃষ্ণচূড়া ছাড়া কোনো কবিতা হবে না আজ কৃষ্ণচূড়া ছাড়া কারো ভালোবাসা জমবে না! ---------------------------...

ভালবাসার চিঠি

Image
কেনো জানি খুব কান্না পাচ্ছে! শূন্যতা, পূর্ণতা, নির্ভরতা নাকি নিঃসঙ্গতার জন্য, জানি না। শুধু বুঝতে পারছি বুকের ভিতরে কোথায় জেনো লুকানো জায়গা থেকে একদল অভিমান প্রচণ্ড কান্না হয়ে দু’চোখ ফেটে বেরুতে চাইছে। তুমি কাছে নেই বলে শূন্যতা তার ইচ্ছে মত দেখাচ্ছে তার নিষ্ঠুর খেলা। আমিতো তোমার বুকে মুখ লুকালেই বাঁচি এখন! কিন্তু তুমি যে কত দূরে! বলতো! আজ শেষ বিকেলের পাহাড় ছুঁয়ে ছুটে আসা দমকা হাওয়ার জড়িয়ে দেয়া মেঘের মতো ছোট্ট একটি ঘটনা আমার সব দ্বিধাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো! বুঝলাম, মহাকাল যে হাস্যকর ক্ষুদ্র সময়কে “জীবন” বলে আমাকে দান করেছে। সেই জীবনে তুমি-ই আমার একমাত্র মানুষটি, যার পাঁচটি আঙ্গুলের শরণার্থী আমার পাঁচটি আঙ্গুল, যার বুকের পাঁজরে লেগে থাকা ঘামের গন্ধ আমার ঘ্রাণশক্তির একমাত্র গন্তব্য। যার এলোমেলো চুলে আমি-ই হারিয়ে যাবো। আর আমি হারিয়ে যাবো ভালবাসতে বাসতে!!! যার দুটো অদ্ভুত সুন্দর মধুভরা ঠোঁটের উষ্ণতায় আর তাই জীবনটা আজ ঠিক সেই অদ্ভুত ফুলগুলোর মতই মতই সুন্দর, যা দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। আর তুমি আমায় পরম মততায় আলতো জড়িয়ে ধরে তোমার ঠোঁটের সেই খুব মিষ্টি ছোঁয়ায় ভরে দিয়েছিলে স...

ভালবাসা লুকিয়ে থাকে

Image
একমুঠো রেশমি কাচের চুড়ি দিয়ে যখন কেউ বলে,"হাতটা বাড়িয়ে দাও তো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।" একটা কাজল দিয়ে যখন কেউ বলে, "এই যে মেয়ে! তোমার চোখ যেন কখনো কাজল ছাড়া না হয়।" অফিস থেকে ফেরার পথে ফুল, চকলেট কিংবা আইসক্রিম এনে যখন কেউ বলে, " দেরী করেছি বলে প্লিজ রাগ করো না। আমার পাগলিটার জন্য এগুলো আনতে গিয়ে একটু দেরী হয়ে গেল। দোকানে ভিড় ছিল যে!" পূর্ণিমা রাতে যখন কেউ মধ্যরাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলে, " এই যে মেঘকন্যা! আর ঘুমাতে হবে না। অনেক তো ঘুমালে এবার, আমার বুকে মাথা রেখে চাঁদের জ্যোৎস্নায় স্নান করো।" ছুটির দিনে যখন কেউ বলে, "এই শোনো! আজ কিন্তু নীল শাড়িতে সুন্দর করে সাজবে। আর, হ্যাঁ। তোমার শাড়ির কুঁচিটা কিন্তু আমি ঠিক করে দেব। তোমায় নিয়ে আজ চষে বেড়াবো এই শহরের প্রত্যেকটা অলিগলি। " অসুস্থের সময় যখন কেউ বলে, " আমি চা করে আনছি আর রান্নাটাও আজ আমি করবো। তোমার আজ কোন কাজ করতে হবে না। যদিও ভালো রান্না করতে পারি না, একদিন না হয় আমার হাতের বাজে রান্না খেয়ে টেস্ট করো।" নির্ঘুম রাতে যখন কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো করে তার উষ্ণ...

তুমি আমার মানে, পুরোটাই আমার

Image
তোমাকে ভালোবাসি মানে, পুরোটাই ভালোবাসি। তোমার এলোমেলো চুল, চোখের নিচের কালি, মেদযুক্ত পেট, ঘর্মাক্ত শরীর কিংবা একটা আস্ত অগোছালো তোমাকেও পুরোপুরি ভালোবাসি। যে মানুষ একবার আমার হয়েছে, সে মানুষ যত'টাই বদলাক, সে মানুষ আমারই। যে কখনো আমার হয়নি, তার বাদামী চোখ, রিবন্ডিং চুল, পারফিউমের ঘ্রাণ, মেদহীন পেট কিংবা একটা আস্ত গোছালো মানুষকেও আমি ভালোবাসিনা। ভালোবাসা ব্যপারটাই এমন অদ্ভুত। একবার ঠিকঠাক ভালোবেসে ফেলতে পারলে, আর কিছুতেই সেসব কমেনা। লাবণ্য কমে, ভালোবাসার মানুষের লাবণ্য কখনো কমেনা। ভালোবাসলে, এলোমেলো চুল দেখে মনে হয়- আহারে, কি অযত্নে পরে আছে একটা শুভ্র ফুল। ভালোবাসলে, মেদযুক্ত পেট দেখে মনে হয়- এত গুলুমুলু হয়ে গ্যাছে ক্যান? ভালোবাসলে, মানুষটার অগোছালো জীবনকে গুছিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। ভালোবাসলে, চোখের নিচে কালি পরে গ্যাছে দেখে মনে হয়- ঠিক মতো ঘুমাও না, নাহ? নিজের প্রতি এত অবহেলা করলে, হবে? ভালোবাসা যত'টা মুগ্ধতার, তারচেয়ে বেশি যত্নের! ভালোবাসা যত'টা মোহের, তারচেয়ে বেশি দায়িত্ববোধের! একবার তোমাকে ভালোবেসেছি মানে, তোমার সমস্তটাই ভালোবেসেছি। আংশিক ভালোবাসাকে, আমি কখনো...

বেঁচে থাকি আরেকটু বেশি, আরও কিছুকাল!

Image
জানালায় দেখি রাতের আকাশ। এক চিলতে জমিতে ঝিকিমিকি আলোর খেলা। এক আকাশ তারা , কয়েকটি কিংবা কয়েক কোটি ! চাঁদটাও আছে আজ , ফুটেছে জোৎস্নার ফুল ! জোৎস্নার সিঁড়ি বেয়ে আকাশ থেকে দৃষ্টি নামে। অবাক হয়ে দেখি আঁধারের বুকে জোনাকির ঝাঁক ! আকাশের তারাদের যেন নামিয়েছে মর্ত্যে ! রুদ্ধশ্বাসে চেয়ে থাকি জানালায় পাওয়া রাতের রূপে !    হঠাৎ উপলব্ধি করি , এই সৌন্দর্য নস্বর। হারিয়ে যাবে একদিন ! কিংবা হারিয়ে যাব আমি। ভেবে দুঃখ হয়না মোটেই। মৃত্যু আছে বলেই না জীবন এত সুন্দর ! মুহূর্তেই আঁধার রাত , এক চিলতে আকাশ কিংবা জোনাকির ঝাঁক , সব হয়ে ওঠে অসাধারণ ! মৃত্যু আছে বলেই না সাধ জাগে , পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকি আরেকটু বেশি , আরও কিছুকাল !

বেদনার করিডর

Image
বেদনার করিডরে চেয়ে চেয়ে মন ভাবে এ পথের শেষ কই ? কার্নিশ এ জমে নীরবতা দেহটাই বেচে আছে আমি নই ? ঝড় ওঠে মনে ঝড় ওঠে হায় প্রলয় হাওয়ার হেতু তুমি সে প্রশ্নটা বারে বারে নিরুত্তর ভেঙ্গে যায় তাসঘর কি বিষে

আমি এইভাবেই থাকব পাশে সারাজীবন

Image
বাইরে বারান্দায় দাড়িয়েছে রাহাত। অপেক্ষা করছে শিমুর জন্য। শিমু ক্লাশের ভেতর ঠিক জানালার পাশে বসেছে। একটু পর পর রাহাতকে দেখছে। কি সুন্দর কালো রংয়ের মোটা কাপড়ের ফুলহাতা টি শার্ট পড়েছে। ছেলেটাকে তার বড্ড মায়া লাগে। আজ যেন একটু বেশিই লাগছে। সত্যিই তো !! আজ কি হলো শিমুর ?! কালো শ্যাম বর্নের ছেলেটাকে এত ভালবাসতে ইচ্ছে করছে কেন ! রাহাত বাইরে থেকে মুচকি হাসি দিয়ে হাতের ইশারায় বললো - " আমি আছি "! শিমুর কোনভাবেই ক্লাশে মনোযোগ নেই। একটু পর পরই রাহাতের দিকে চায় , আর ভেতরে তার অন্য এক শিমু যেন চিৎকার দিয়ে বলে - এইভাবেই সারাজীবন আমার পাশে থাকবে রাহাত ?! ক্লাশ শেষে শিমু দরজা পেরিয়ে বারান্দায় এসে কাঠখোট্টা মুখ করে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলে - কি দরকার ওমন হিরোগিরি করে ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার ?! যত্তসব নেকামি ! রাহাত মুচকি হেসে শিমুর কানের কাছে গিয়ে বলে --- " আমি এইভাবেই থাকব পাশে সারাজীবন। তোমাকে ভালবাসি প্রচণ্ড - এরচেয়ে কোনও সত্য আপাতত আর জানিনা