হিমিকা এখনও হিমালয়ের অপেক্ষায়
হিমালয়
জানিনা কেমন আছ। আজ অনেকদিন পর খুব করে তোমাকে মনে পড়ছে। জানিনা কেন। তাই ভাবলাম একটা চিঠি লিখে ফেলি তোমার কাছে।
তোমাকে বলেছিলাম একদিন, হিমালয় থেকে হিমু হবে? একদিন কটকটে হলুদ একটা পাঞ্জাবি পরে হাঁটবে আমার পাশে? আমিও নাহয় নীল শাড়িতে রুপা হব সেদিন।
হিমুরা কারও হাত ধরেনা। তুমি কিন্তু আমার হাত ধরে থাকবে। যাবে একদিন?
হিমুরা কারও হাত ধরেনা। তুমি কিন্তু আমার হাত ধরে থাকবে। যাবে একদিন?
তুমি বলেছিলে, ঐসব বাউন্ডুলে মার্কা চিন্তা ভাবনা তোমার পছন্দ না। তুমি নাকি খুবই বাস্তববাদী। আমার মাথা থেকে ঐসব হিমুর ভূত ছাড়াতে বলেছিলে তুমি।
ভূত আমি ছাড়িয়েছিলাম। আর কখনও ধরিনি ওরকম কোন বায়না।
তোমাকে একদিন বলেছিলাম, কাগজে কলমে একটা চিঠি লিখতে। আক্ষরিক অর্থে প্রেমপত্র। ভালোবাসার কিছু কথা কাগজে বন্দি করে।
তুমি বলেছিলে, চিঠি ফিঠি লেখার সময় নেই তোমার। আমাকে ওসব ফালতু আবেগ ঝেড়ে ফেলতে বলেছিলে তুমি।
ওহ, ঐদিন অবশ্য বাংলিশ একটা মেইল পেয়েছিলাম তোমার।
ওহ, ঐদিন অবশ্য বাংলিশ একটা মেইল পেয়েছিলাম তোমার।
ফালতু আবেগগুলোকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলাম একে একে।
একদিন বলেছিলাম, চলনা ভিজি বৃষ্টিতে। ঐ যে ক্যাম্পাসের সারি সারি কদম গাছে ফুটে থাকা স্নিগ্ধ ফুলগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছিল আমাদের। ঐদিন।
তুমি বললে, বাদ দিতে এসব পাগলামি। শেষে নাকি ঠান্ডা লাগিয়ে জ্বর বাধাতে পার। আমার পাগলামিকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে নিজের অসুবিধা করতে পারবেনা তুমি।
মেনে নিলাম। পাগলামিগুলোকে ছেড়েই দিলাম।
ফুচকা খাওয়া ছেড়ে দিলাম।
বেলিফুল! কত ভালোবাসতাম। ভুলে গেলাম ঐ ফুলের সুবাসও। কারণ, তোমার ভাষায় ওটা ফালতু জংলি ফুল।
বৃষ্টি ভুলে গেলাম। কারণ, বৃষ্টি তোমার পছন্দ নয়।
স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিলাম। কারণ, স্বপ্নবাজদের তুমি নাকি দু’চক্ষে দেখতে পারনা।
আমি এভাবেই ‘আমার আমি’ থেকে ‘অন্য এক আমি’ হয়ে গেলাম। হারিয়ে গেলাম নিজের থেকেই। অচেনা কোথাও।
ঐ ‘আমার আমি’টাকেই তুমি নাকি ভালোবেসেছিলে। তাহলে ভালোবাসার দায় দেখিয়ে আমাকে কেন পালটে দিলে তুমি!
আমিও নিজের চেয়ে তোমাকেই বেশি ভালোবেসে হতে চাইলাম তোমার মনের মত!
কী যে বোকা ছিলাম আমি!
তারপর একদিন।
তুমি ঠিকই হিমালয় থেকে হিমু হলে।
হিমুরা কোন বাঁধনে জড়ায় না। তুমিও জড়ালে না। আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
হঠাৎ হিমুর বৈশিষ্ঠ্য তোমার মাঝে কেন দেখা দিল তার কারণটা অবশ্য কখনই বুঝতে পারিনি।
আমাকে ছেড়ে চলে গেলে তুমি। যাক, তবুও তো একদিনের জন্য হলেও হিমু সাজলে!
ভালো থেক।
হিমিকা
______________________________________________
পরিশিষ্টঃ
এরপর হিমিকা চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলে। এমনিভাবে প্রতিদিন সে হিমালয়কে একটা করে চিঠি লেখে। কিন্তু কোন চিঠিই হিমালয়ের কাছে পৌঁছায় না। প্রতিদিনের চিঠি প্রতিদিন পুড়ে ছাই হয়। তবু হিমিকা এখনও হিমালয়ের অপেক্ষায় দিন গোনে।
Comments
Post a Comment